স্থানীয় প্রতিনিধিঃ প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে এক তরুণ একদল মেয়ের ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে বিব্রত ও অপমানিত হয়েছেন। কিছু মেয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে 'প্রেমের প্রস্তাব' দেওয়ার নামে একটি ডেয়ারের খেলা চালায়, যা এক পর্যায়ে ছেলেটিকে হতভম্ব ও হতাশাগ্রস্ত করে তোলে।


ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় একটি ব্যস্ত সড়কের পাশে, যেখানে ছেলেটি প্রতিদিনের মতো প্রাইভেট টিউশনে যাচ্ছিল। সেসময় কয়েকজন মেয়ে তাকে ঘিরে ধরে হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং একটি ফুল বাড়িয়ে দেয়। তার বন্ধুরা বিষয়টি আন্তরিক প্রস্তাব মনে করে উৎসাহিত করায় সে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও ফুলটি গ্রহণ করে। তখনও সে ভাবেনি যে এটি শুধুই এক প্রকারের মজা বা কৌতুকের অংশ হতে পারে।


কিন্তু কিছুক্ষণ পরই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। মেয়েটি উচ্চস্বরে হেসে জানায় যে এটি তার বান্ধবীদের চ্যালেঞ্জ ছিল, এবং এটি কেবল একটি "ডেয়ার" ছাড়া কিছুই নয়। মেয়েটির এভাবে কথা বলায় উপস্থিত সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করা হয়, যা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।


এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এমন ধরনের কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র ‘মজা’ হিসেবে দেখা সঠিক নয়। একজনকে এই ধরনের মজার শিকার করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা এবং তার মানসিক শান্তি নষ্ট করা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। অনেকেই এই ঘটনাটিকে ইভটিজিং হিসেবে দেখছেন, যেখানে একজন ছেলেকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। ইভটিজিং সাধারণত মেয়েরা হয়রানির শিকার হলেও এখানে ছেলেটিকেও একইভাবে মানসিকভাবে হয়রানির শিকার করা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে তরুণদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ ও পারস্পরিক সম্মানবোধের অভাবকে দায়ী করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।


ইভটিজিং এবং সমাজের প্রতিক্রিয়া


অনেকেই এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, ইভটিজিং শুধু শারীরিক বা মৌখিক হয়রানি নয়, বরং এমনভাবে কাউকে অপমান করা বা মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগ করাও ইভটিজিংয়ের মধ্যে পড়ে। আজকের সমাজে ইভটিজিং শুধু মেয়েদের বিষয় নয়, ছেলেরাও অনেক সময় এই পরিস্থিতির শিকার হন। এই ঘটনাটি তারই উদাহরণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কর্মকাণ্ড কিশোর-কিশোরীদের মাঝে সামাজিক মূল্যবোধের ঘাটতি তৈরি করে, যা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।


শিক্ষাবিদ ও মনোবিদরা মনে করছেন, এ ধরনের আচরণ তরুণদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সামাজিক শিষ্টাচারের ঘাটতির লক্ষণ। কোনো ব্যক্তিকে ডেয়ারের নামে বিব্রত করা, তাকে উপহাসের বস্তুতে পরিণত করা অবশ্যই উচিত নয়। এর ফলে তার আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শান্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার এই মানসিক আঘাত অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা একটি স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে।


ভবিষ্যতে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং করণীয়


সমাজের অনেকেই এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেন, স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে পরিবারের মধ্যেই ছেলেমেয়েদের মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া উচিত। প্রতিটি মানুষকে সমান সম্মান ও মর্যাদা দিতে শেখানো উচিত, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পরিবারের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন, তরুণদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ ও সামাজিক শিষ্টাচার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগ্রামের আয়োজন করা যেতে পারে।


এই ধরনের ইভটিজিংয়ের প্রতিরোধে সমাজের প্রতিটি স্তরের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহানুভূতিশীল মনোভাব একান্ত প্রয়োজন।

Leave a Comment